এ কেমন ভালোবাসা । লেখিকা খেয়া । পর্ব-02-04

 

পর্ব-০২+০৩
লেখিকা-#খেয়া
রাত বাজে দেড়টা।অথচ আমার ঘুম আসার নামই নেই।
আচ্ছা,রুদ্ধ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।তখন কেন রুদ্ধ ভাইয়াকে দেখে দীপ্ত চুপ করে গেলো।এখন এটা না জানা পর্যন্ত আমার ঘুম আসবেনা।
তবে একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করেছি রুদ্ধ ভাইয়া আর দীপ্তর মধ্যে বেশিরভাগ সময় চোখে চোখে কথা হয়।জানিনা এদের কী সমস্যা।
রাতে দেরিতে ঘুম আসার ফলে সকালে উঠতেও দেরি হয়ে গেলো।ফলস্বরূপ আজ কোচিংয়ে যাওয়া হলো না।
খাবার খেয়ে একটু টিভি দেখতে বসেছিলাম।তখন আবার সেই হাতি মার্কা কুকুরটা লাফ দিয়ে আমার গাঁয়ে উঠতে এলেই আমি দিলাম এক দৌড়।সাথে সাথে গেলাম পড়ে।সামনে রুদ্ধ ভাইয়া ছিল তাকে নিয়েই পড়ে গেলাম।নিচে রুদ্ধ ভাইয়া আর তার ওপর আআমি।এবার কী হবে?
রুদ্ধ ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
---- এই যে স্টুপিট মেয়ে,উঠবে কী? নাকি সারাদিন এভাবেই থাকার শখ।
আমি তাড়াতাড়ি ওনার ওপর থেকে উঠে গেলাম।
---- সরি সরি।
---- এভাবে দৌড়াচ্ছিলা কেন?
----- মানে ঐ কুকুরটা বারবার আমার গাঁয়ে উঠছে তাই।
---- ওহ।আচ্ছা,আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
---- হুম নিয়ে যান।
আজ যেন সময় কাটছেই না। মামনি দুপুরের রান্না করছে।আংকেল হসপিটালে।দীপ্ত বাসায় নেই।তবে রুদ্ধ ভাইয়া বাসায় আছেন।
একটু পর মামনি এসে বলল
---- রাত,তুই বলেছিলিনা তোর কিছু কেনার আছে।তুই রেডি হয়ে নে। রুদ্ধ ফ্রি আছে আজ তোকে নিয়ে যাবে।
---- আচ্ছা।
আমিও নাচতে নাচতে রেডি হতে চলে গেলাম।মনে তো লাড্ডু ফুটছে আমার।
-------------------
রুদ্ধ ভাইয়া আর আমি একটা শপিংমলে গেলাম।এখন এগারোটা বাজে।লোকজনও প্রচুর।
রুদ্ধ ভাইয়া সামনে সামনে হাঁটছে আর আমি পিছনে।আমি একটা দোকান থেকে দুটো ওড়না আর একটা ড্রেস নিয়ে নিলাম।আরো কিছু টুকটাক কেনাকাটা করে ফুডকোর্টের কাছে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়া খাবার অর্ডার করতে যাচ্ছিলেন তখনই তার কাছে একটা মেয়ে এলো।
রুদ্ধ ভাইয়া আমাকে এখানে একটু বসতে বলে ঐ মেয়েটার সাথে চলে গেলো।আমার তো খুব রাগ লাগছে। মাথাটা একদম গরম হয়ে আছে। মাথা ঠান্ডা করার জন্য একটা কোল্ডকফি ওর্ডার করলাম।
কফি আসার পর সেটা নিতে যাওয়ার আগেই কেউ কফিটা খেয়ে ফেললো।সামনে তাকিয়ে দেখলাম দীপ্ত।এবার মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।
---- আপনি অভদ্রের মতো কফিটা খেয়ে নিলেন কেন?
----আবার আপনি।
---- আচ্ছা তুমি।তুমি এখানে কী করছিলে?
---- গার্লফ্রেন্ডের সাথে এসেছিলাম।তবে ভাইয়াকে বলোনা।বাই দ্যা ওয়ে ভাইয়া কই গেছে।
----আমি কী জানি।আচ্ছা তুমি কাল কেন বললে না তোমার ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।
---- আসলে ভাইয়া যে একজনকে ভালোবাসে সেটা আমি জানি। তবে সে যে কে সেটা যে কে এটা আমি জানিনা।
---- ওহ।মেয়েটা মেবি খুব ভাগ্যবান হবে।
---- হুম।
" একটু পরে রুদ্ধ ভাইয়া দীপ্তকে ফোন করে বলল সে যেন আমায় বাসায় পৌঁছে দেয়।তার নাকি কী কাজ পড়ে গেছে।"
মল থেকে বেড়োনোর সময় দেখলাম রুদ্ধ ভাইয়া আর ঐ মেয়েটা একটা দোকানে চুড়ি দেখছিলো।এবার আমার সত্যি কান্না পাচ্ছে।এটাই তাহলে তার কাজ।
বাসায় এসে সোজা রুমে ঢুকে গেছি।দুপুরে খায়ওনি।মামনিকে বলেছি মাথা ব্যাথা করছে তাই সেও জোর করেনি। কিন্তু এখন বিকেল হয়ে গেছে।আর আমারও খুব খিদে পেয়েছে।আমি একদম খিদা সহ্য করতে পারি না।তাই খাওয়ার জন্য বাইরে গেলাম। কিন্তু কাউকে দেখলাম না। তখনই রুদ্ধ ভাইয়া এসে বললেন
---- তোমার খাবারটা টেবিলে রাখা আছে।হয়ত ঠান্ডা হয়ে গেছে একটু গরম করে নিয়ো।
----মামনি কোথায় গেছে।
----মামনি আর দীপ্ত বাজারে গেছে।
---- আচ্ছা।
---- এই মেয়ে কোথায় যাচ্ছো।
---- কেন, খাবার গরম করতে।
----লাইফে তো কখনো রান্নাঘরে যাওনি।এখন গেলে নির্ঘাত হাত পোড়াবে।একটু দাঁড়াও আমি খাবার গরম করে নিয়ে আসছি।
" রুদ্ধ ভাইয়া খাবারটা গরম করে নিয়ে এলেন।আমিও বেশি কথা না বলে খেয়ে ঘরে চলে গেলাম।
বিকেলে বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলাম। তখনই কিছু কাগজ উড়ে এলো বেলকনিতে।কাগজগুলো উড়ে এসেছে দীপ্তর রুম থেকে। কাগজগুলোতে বেশ সুন্দর ড্রয়িং করা।
এত সুন্দর স্কেচ দীপ্ত করেছে।সবগুলোই একদম জীবন্ত লাগছে।
আমি অানমনে ছবি গুলো দেখছিলাম তখনই দীপ্ত এসে বলল
----না বলে কারো জিনিস নেওয়াটা কিন্তু চুরি।
---- আমি না বলে কী নিলাম।এগুলো উড়ে এসেছে।
---- তবুও যে তুমি এগুলো দেখলে।
---- আচ্ছা সরি আর দেখবোনা।
আমি ওর জিনিসগুলো ওর হাতে দিয়ে দিলাম।
---- রাগ করো না কিন্তু।আমি এভাবেই কথা বলি।
---- হুম! সে তো দেখতেই পাচ্ছি।
---- আমি তো জানতাম কথা শোনা যায়।কথা আবার দেখাও যায় নাকি।
---- ধুর।
আমি তখন রুমে এসে বই নিয়ে বসলাম।এখন সিরিয়াসলি অনেক পড়া উচিৎ আমার।
একটু পরে রুদ্ধ ভাইয়া এসে একটা নোট দিয়ে গেলেন আমায়।আজ নাকি কোচিংয়ে এটাই পড়িয়েছে।ভাইয়া নাকি এটা ফারহানের কাছে থেকে নিয়ে এসেছেন।
আমিও খানিক পড়ে মামনির কাছে গেলাম।মামনিকে সন্ধ্যার নাস্তা বানাতে সাহায্য করে এসে মাত্র সোফায় বসেছি তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠল।
আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।শপিংমলের ঐ মেয়েটা ছিল দরজার ওপাশে।আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই সে ভিতরে ঢুকে রুদ্ধ ভাইয়ার ঘরে ঢুকে গেলো।
---- ওটা নিহা আপু।ভাইয়ার ফ্রেন্ড।
" দীপ্তর কথার উত্তরে আমি কিছু বললাম না।"
প্রায় ঘন্টাখানেক পর নিহা নামের মেয়েটা বেড়িয়ে এসে মামনিকে জিঙ্গেস করল
---- এটা কে আন্টি।
----ও রাত।এডমিশনের জন্য ঢাকায় এসেছে।
" নিহা আপু আমার দিকে এগিয়ে এসে আমায় বলল"
---- ওহ।সো রাত জানোতো, আমার আবার এভাবে অন্যের বাড়িতে থেকে পড়াশোনাটা পছন্দ না।যতই হোক অন্যের বাড়ি তো অন্যের বাড়িই হয়।আমার বাপি অবশ্য আমাকে এভাবে যার তার বাড়িতে থাকতে দিতো না।তাও আবার যে বাড়িতে এমন দুটো ছেলে আছে।
নিহা আপুর কথায় খুব কষ্ট পেলাম।দৌড়ে ঘরে চলে গেলাম।খুব কান্না পাচ্ছে আজ।
আমার পেছনে মামনিও এলো।মামনি আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
---- আমি কিন্তু তোর ওপর খুব রেগে আছি, রাত।ও বলল আর তুই শুনলি।তুই তো বলতে পারতি এটা তোরও বাড়ি।
---- এটা তো সত্যি আমার বাড়ি না,মামনি।
---- আজ তোর বাড়ি না ঠিকই তবে দেখিস খুব শীঘ্রই এটা তোর বাড়ি হবে।তোর পুরো অধিকার থাকবে এই বাড়িতে।
---- মানে?
---- মানে কিছুনা।তুই এখন ফ্রেশ হয়ে পড়তে বস।
---- আচ্ছা, মামনি।
" আমার মন খারাপ দেখে আজ আর রুদ্ধ ভাইয়া আমায় পড়াতে এলেন না।"
------------------
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই নিজের পাশে বেশ বড় কিছুর অস্তিত্ব টের পেলাম।তাকিয়ে দেখলাম সেই হাতি মার্কা ক্যান্ডিটা। এ ঘুমানোর কন্য আমার বেডটাই পেলো।
আমি রুম থেকে বেড়িয়ে দীপ্তর রুমে নক করলাম।ভেতর থেকে দীপ্ত আর রুদ্ধ ভাইয়া বেড়িয়ে এলো।আমি কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে সরাসরি বললাম
---- আপনার হাতি মার্কা ক্যান্ডিটা আমার রুমে আছে।ওকে গিয়ে নিয়ে আসুন প্লিজ।
দীপ্ত এসে ক্যান্ডিকে নিয়ে গেলো।
আমিও খাবার খেয়ে কোচিংয়ের জন্য গেলাম রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে।রুদ্ধ ভাইয়াও আজ আমার সাথে গেলো।তার নাকি স্যারের সাথে কী কথা আছে।খানিক দূর এগোতেই ফারহান বলে উঠল
---- চিঠিটার ব্যাপারে কী ভাবলে,আরাত্রি।
" চারদিন আগে ও আমায় একটা চিঠি দিয়েছিল।যাকে লাভলেটার বলে আরকী।আমি তো ভয়ে শেষ।পাশে তাকিয়ে দেখি রুদ্ধ ভাইয়া ভয়ানক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে"।
---- এখানে এগুলো করতে আসো, রাত।
---- না মানে ভাইয়া,আমি ওকে অনেকবার নিষেধ করেছিলাম তাও ও,,,
পুরো কথা শেষ করার আগেই রুদ্ধ ভাইয়া আমার হাত ধরে গাড়ির দিকে হাঁটা ধরলেন।
এজন্মে হয়ত আমার আর কোচিং কর হলোনা।মেডিকেলেও চান্স পাওয়া হলোনা।
রুদ্ধ ভাইয়া আমায় বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন হাসপাতালে।মামনিকেও উনি কীযেন বুঝিয়েছে।
একটু পরে আমায় মেসেজ করে বললেন--
" ফাস্ট দুটো চ্যাপ্টার রেডি করে রেখো আমি এসে পড়া নিবো।আর ফারহানের দেওয়া চিঠিটার একটা ছবি তুলে এখনই পাঠাও আমায়।কুইক।"
এখন আমি কী করব।আমি নিজেও এখনো চিঠিটা খুলে দেখিনি। নাজানি কী লেখা আছে ওটায়।এখন কী হবে।
আমি চিঠিটার ছবি আর পাঠালাম না ভাইয়াকে।রুদ্ধ ভাইয়া অনেক কল করেছে ধরিনি আমি।
মাত্রই চিঠিটা হাতে নিয়ে ছিলাম পড়ার জন্য।কিন্তু পড়ার আগেই কেউ আমার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলেন।
রুদ্ধ ভাইয়া! এবার কী হবে।
উনি চিঠিটা খুলে পড়লেন।না জানি ওটাতে কী লেখা ছিল।তবে উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি প্রচুর রেগে আছেন।
----কী এমন লেখা ছিল ওটায়?একটু দেখাবেন ভাইয়া।
ভাইয়া রাগী মুখে চিঠিটা আমায় দিলেন।চিঠিটা পড়ে তো আমার চক্ষু চরকগাছ। ওখানে লেখা ছিল,,,
(চলবে)
( আজ যদি গঠনমূলক মন্তব্য না পায় তবে নেক্সট পার্ট সত্যি দিবনা।)
পর্ব-০৩
লেখিকা-#খেয়া
চিঠিতে কী লেখা আছে, রাত।
রুদ্ধ ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠল কথাটা।আমার তো ভয়ে অলরেডি গলা শুকিয়ে গেছে।
---- বিশ্বাস করেন রুদ্ধ ভাইয়া,আমি সত্যি এসবের কিছু জানিনা।
---- তুমি কী একজনের সাথে অন্যজনের প্রেম করিয়ে দিয়ে কমিশন পাও।
---- না মানে,আসলে ফারহান দীপাকে পছন্দ করে। আর দীপার সাথে আমার ভালো সম্পর্ক। তাই আমাকে বলেছিল যেন ওর সাথে দীপার একটু সেটিং করিয়ে দেয়।
---- এই ইডিয়েট মেয়ে, সেটিং কী ধরনের ল্যাংগুয়েজ।
---- সরি,সরি ভাইয়া। আর বলব না।
----ওকে, গিয়ে পড়ায় মন দাও।এভাবে পড়লে মেডিকেলে চান্স পাওয়া হবেনা,বুঝেছো।
---- হুম।
অনেকক্ষণ ধরে বই নিয়ে বসে আছি।অনেক পড়েছি।আর পড়তে ইচ্ছে করছেনা।এবার তো মাথায় সব পড়া তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।
একটু পরে দীপ্ত আমার রুমে এলো।এসে আমার সামনে চেয়ার টেনে বলল
---- কী ব্যাপার বলোতো।তোমার আর ভাইয়ার মাঝে কী চলছে,হুম।
---- কী চলছে মানে? একটু ক্লিয়ার করে বলবা প্লিজ।
---- কাল নিহা আপুর কথায় তোমার খারাপ লেগেছে, তাইনা।খারাপ লাগারই কথা।কাল তোমাকে এসব কথা বলার জন্য ভাইয়া নিহা আপুকে অনেক কথা তো শুনিয়েছে সাথে একটা থাপ্পর ও মেরেছে তাকে।
---- কীহহহহ,,
---- আরে লাফাও কেন।আমি সিরিয়াসলি বলছি।আর আজ তো ভাইয়া ফারহানকেও নিষেধ করেছে তোমার আশে পাশে আসতে।ভাইয়া তোমার ওপর এত প্রোটেকটিভ কেন বলোতো?
---- আমি কী করে জানবো।আচ্ছা তুমি কী জানো রুদ্ধ ভাইয়া কাকে ভালোবাসে।
---- না, সেটা তো জানিনা।তবে ভাইয়া আমাকে একবার বলেছিল যে,তার লাইফে এমন একজন এসেছে যার মায়ায় সে পুরোপুরি ডুবে আছে।এখন ভাইয়ার এমন কথার কী মানে হতে পারে বল।
"দীপ্তর এমন কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রুদ্ধ ভাইয়া সত্যি কাউকে ভালোবাসে।"
---- এই যে, রাত।কী ভাবছ।
---- না কিছু না।
---- তোমার নামটা কে রেখেছিল বলোতো। মানে তোমার নামে রাতও আসে আবার রাত্রিও আসে।আরাত্রি! কিউট নেম।
---- হুম।বাবা রেখেছিল নামটা।
---- ওহ।তুমি পড়ো, ভাইয়া আবার পড়া না পারলে কিন্তু খুব রেগে যায়।
---- হুম।
একটু পর রুদ্ধ ভাইয়া এলো।আমিও ভালোমতো সব পড়া দিলাম।একদম বেশি কথা বললাম না।রুদ্ধ ভাইয়াও চুপচাপ পড়িয়ে চলে গেলো।
-----------------
সবকিছু নরমালি চলছে।দিন চলেছে তার আপন নিয়মে। আমার এডমিশন টেস্টের আর বেশি দেরি নেই।একদিন মন প্রাণ দিয়ে পড়েছি।রুদ্ধ ভাইয়াও যথেস্ট হেল্প করেছে।তবে একদিন আমি রুদ্ধ ভাইয়াকে যথাসম্ভব এড়িয়ে গেছি।তাকে একতরফা ভালোবেসে কষ্ট পেতে চায়না আমি।
তবে একদিন একটা জিনিস আমি প্রায়ই খেয়াল করেছি রুদ্ধ ভাইয়া কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।সে চাহনিতে শুধু একরাশ মুগ্ধতা থাকে।
আজ আমার এডমিশন টেস্ট।কাল বাবা এসেছে।আজ আমার সাথে হলে বাবা আর রুদ্ধ ভাইয়া এসেছে।তারা আমায় একদম টেনশন ফ্রি থাকবে বলছে।কিন্তু আমি একদম শান্ত হতে পারছিনা।খুব টেনশন হচ্ছে আমার।
মেডিকেলে পড়ার শখটা আমি গত দশ বছর ধরে নিজের মধ্যে পুষে এসেছি।সে ইচ্ছেটা পূরন হবে তো?
পরীক্ষা দিয়ে এসেছি অনেকক্ষণ।পরীক্ষা খুব বেশি ভালো না হলেও যথেষ্ট ভালো হয়েছে।বাবা দুপুরেই চলে গেছে।এখন প্রায় বিকেল হয়ে গেছে।অথচ আমার টেনশন এখনও কম হয়নি।রেজাল্ট পাবলিশ না হওয়ার পর্যন্ত ঘুম আসবেনা।
আর ওদিকে দীপ্ত খুব চিল মুডে আছে।ওর নাকি মেডিকেলে পড়ার কোনো শখ নেই।
কিছুক্ষণ পর রুদ্ধ ভাইয়া এসে বলল
---- রেডি হয়ে যাও, রাত।চলো বাইরে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।তোমার মাইন্ড ফ্রেশ হয়ে যাবে আর টেনশনও কমে যাবে।
---- আপনি সত্যি আমায় ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
----হুম।
---- রাত,তুই যা।তোর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।
---- আচ্ছা মামনি।
আমিও লাফাতে লাফাতে রেডি হতে চলে গেলাম।রুদ্ধ ভাইয়া যেই শাড়িটা দিয়েছিলেন সেটা পড়ে সুন্দর মতো তৈরি হয়ে নিচে নেমে এলাম।আজ সিরিয়াসলি আমায় খুব সুন্দর লাগছে।যদিও নিজের সুনাম নিজের করা উচিত নয়।
----আরে, আমার রাত মাকে তো খুব সুন্দর লাগছে।একদম পরীর মতো।
---- ধন্যবাদ মামনি।
---- তুই যা,রুদ্ধ বাইরে গাড়ির কাছে আসে।
---- হুম।
বাইরে এসে দেখি রুদ্ধ ভাইয়া গাড়িতে হেলান দিয়ে মোবাইল স্ক্রলিং করছে।আমাকে দেখা মাত্রই উনি খানিকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।তার চোখে এত মুগ্ধতা আমায় মেরে ফেলতে যথেষ্ট।
---- চলেন, ভাইয়া।
---- হুম চলো।
----কোথায় যাবে বলো?সন্ধ্যার টাইমে হাতিরঝিলে যাওয়া যায়।তোমার ভালোলাগবে জায়গাটা।
----আচ্ছা সেখানেই চলুন।
অনেকক্ষন পর আমরা হাতিঝিলে এসে পৌঁছালাম।সত্যি জায়গাটা খুব সুন্দর।চারিদিকে এত রংবেরঙের আলো এত মানুষ দেখে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।
রুদ্ধ ভাইয়া আর আমি বেশ খানিক্ষন ঘুরলাম।আজকের দিনটাকে নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ একটা দিন মনে হচ্ছে।নিজের প্রিয় মানুষটার সাথে সময় কাটানোর আনন্দটাই অন্যরকম।
ইদানিং কেন জানি রুদ্ধ ভাইয়ার ব্যবহারে আমার সন্দেহ হয়।উনি কী আমায় পছন্দ করেন।তাহলে উনার লাইফে অন্য একজন আছে।
---- এই যে চিন্তামনি এত কী ভাবো সারাদিন।
---- কিছুনা।
----ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত না।
---- মানে?
---- আজ রাতে আমার কাছেও একটা রাত আছে।আমার রাত।
---- আমার রাত? মানে?
---- হুম,এই রাত একান্তই আমার।তবে তোমার পিচ্চি মাথায় এটা ঢুকবেনা, পিচ্ছি।
---- আমাকে আপনার কোন এঙ্গেলে পিচ্চি মনে হয়।
---- তা নয় তো কী।তুমি সত্যি পিচ্চি।তাহলে এতদিন কবে আমার মনের কথা বুঝে যেতে।
---- কিছু বললেন।
---- না।অনেক রাত হয়ে গেছে চলো বাসায় যায়।আম্মু টেনশন করবে।
---- হুম চলেন।
-----------------
আজ এডমিশন টেস্টের রেজাল্ট দিবো।প্রচন্ড টেনশনে আছি।সকাল থেকে বাবা- মা কম হলেও দশবার ফোন দিয়ে বলেছে টেনশন ফ্রি থাকতে কিন্তু আমি পারছিনা।জানিনা কী হবে।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছি।আজ আংকেলও হাসপাতালে যায়নি।
রুদ্ধ ভাইয়া রেজাল্ট দেখার চেষ্টা করছে।আর আমি বসে বসে নখ কামড়াচ্ছি।কিছুক্ষন পর রুদ্ধ ভাইয়া বলল
---- রাত, তুমি আসলে মেডিকেলে চান্স,,,
রুদ্ধ ভাইয়ার কথা শুনে বুঝেনিলাম যে আমি মেডিকেলে চান্স পায়নি। আমি এবার কেঁদেই দিলাম।রুদ্ধ ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল
---- আরে পাগলি, কাঁদছ কেন? তুমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছো।তোমার চান্স হয়ে গেছে।
এবার আমি আরো বেশি কেঁদে দিলাম।তবে এ কান্না আনন্দের। হয়ত এবার আমার স্বপ্ন আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ হবে।
আংকেল এসে আমার পাশে বসে বললেন-
---- তোমার এত ভালো রেজাল্টের জন্য আমাদের কাছ থেকে একটা গিফট কিন্তু তোমার পাওনা রইল।তবে রেজাল্ট ভালো হয়েছে তোমার। কিন্তু গিফট কিন্তু আমাদের চায়।
---- আচ্ছা,আংকেল। কী গিফট চায় তোমাদের।
---- সেটা সময় এলেই বলল।তুই আমাকে কাল বলেছিলি না তুই বাসায় যেতে চাস। কাল আমি তোর বাবা আর মাকে এখানে আসতে বলেছি।কাল ওরা এলে তুই তারপর ওদের সাথেই যাস, কেমন?
---- আচ্ছা,আংকেল।
আমার কথা শেষ না হতেই রুদ্ধ ভাইয়া উত্তেজিত হয়ে বলল
----চলে যাবে, মানে।তো সামনে কিছুদিন পর থেকে রেগুলার ক্লাস শুরু যাবে।
---- হ্যা, তখন ভালোমতো একটা হোস্টেল দেখে উঠে
যাবে।
রুদ্ধ ভাইয়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই কথাটা উনার মনমতো হয়নি।কিন্তু আংকেল আর আন্টির মুখে এখনো মুচকি হাসি বিদ্যমান।যার অর্থ খুব অন্যরকম।
আজ আমার মনটা খুব ভালো।আমি রুমে গিয়ে বাবা- মায়ের সাথে কথা বলে নিলাম।এখন খুব শান্তি শান্তি লাগছে।আমি বাসায় যাবে বলে এখন থেকেই ব্যাগ গোছানো শুরু করেছি।গুনগুন করে গান গায়ছিলাম আর জামা কাপড় গোছাচ্ছিলাম।তখনই রুদ্ধ ভাইয়া আমার রুমে এসে বলল
---- ব্যাগ গোছানো লাগবেনা তোমার।বাসায় যাওয়াও হবেনা তোমার।কারণ,,,,
---- কী কারণ?
---- না কিছুনা।
রুদ্ধ ভাইয়া কিছু না বলেই চলে গেলেন।আমি নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।আচ্ছা আমি চলে গেলে কী উনি আমায় মিস করবেন?
এতদিনে কী আমার প্রতি উনার একটুও ফিলিংস জন্মায়নি?
দুপুরে আন্টিকে টুকটাক রান্নার কাজে হেল্প করে এসে গোসল করে নিলাম।বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখি দীপ্ত আর ক্যান্ডি বিছানায় সে আছে।আমি দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললাম
---- কী চায়?
---- তোমার একটা ওড়না।যেটাতে তোমার গাঁয়ের গন্ধ আছে।তুমি তো কাল চলে যাবে।তাই ক্যান্ডির জন্য চাইছিলাম, আরকি।
নিজের অজান্তেই হেসে দিলাম।কোনো একজন তো আমায় এত পছন্দ করে।
(চলবে)

 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Accept !